ডা. সজল আশফাক: নাকের অ্যালার্জি অনেকের কাছেই একটি পরিচিত সমস্যা। ছোট-বড় সবাই এ সমস্যায় ভোগেন। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১০ শতাংশ মানুষ জীবনের কোনো না কোনো সময় নাকের অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। নাকের অ্যালার্জির এ অবস্থাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় অ্যালার্জিক রাইনাইটিস। অ্যালার্জিক রাইনাইটিস কথার অর্থ হচ্ছে অ্যালার্জিজনিত নাকের প্রদাহ।
নাকের অ্যালার্জি কেন হয়, কীভাবে হয় : মূলত শ্বাসের সঙ্গে নাসারন্ধ্রে ঢুকে যাওয়া অ্যালার্জি উদ্রেককারী বস্তুকেই অ্যালার্জির প্রধান কারণ বলে মনে করা হয়। তবে অ্যালার্জি উদ্রেককারী খাবার গ্রহণের কারণে নাকের অ্যালার্জি হওয়ার ঘটনা খুব একটা দেখা যায় না। শ্বাসের সঙ্গে নাকে ঢুকে পড়া অ্যালার্জি উদ্রেককারী এ বস্তুকে বলা হয় অ্যালার্জেন। এ অ্যালার্জেন বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের নিঃসরণ ও এর প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে নাকে অ্যালার্জিজনিত উপসর্গ সৃষ্টি করে থাকে। ফলে নাকে চুলকানি বা অস্বস্তি, নাকের ঝিল্লি ফুলে যাওয়া ও লালাভ হয়ে যাওয়া, নাক দিয়ে পানি ঝরা ইত্যাদি দেখা যায়। অনেক সময় একটু দেরিতে এ কারণে শ্বাসকষ্টও দেখা দিতে পারে। তবে নাকের এ অ্যালার্জি কার কী কারণে হচ্ছে বুদ্ধিমান রোগী তা সহজেই বুঝে নিতে পারেন। যেমনÑ অনেককেই বলতে শোনা যায়, ধুলাবালি কিংবা শীতের সময় ঠাÐা হাওয়া নাকে লাগলেই তার এ অ্যালার্জি সমস্যা দেখা দেয়। বিষয়টি সচেতনভাবে লক্ষ করলেই বের করা সম্ভব।
সব ঋতুতেই বিভিন্ন ফুলের পরাগরেণু উড়ে বেড়ায় এবং ফাঙ্গাসের স্পোর বা বীজ বেশি বেশি সংস্পর্শে আসার সুযোগ পায়। এসব অ্যালার্জিতে আক্রান্ত রোগীর নাক-চোখ চুলকায়, হাঁচি হয়, নাক দিয়ে পানি পড়ে এবং শেষে নাক বন্ধ হয়ে থাকে। এছাড়া ঘরবাড়ির ধুলায় অবস্থিত মাইটের মল থেকে এ ধরনের নাকের অ্যালার্জি প্রায় সারা বছর ধরেই হতে পারে। তবে মাইটের সঙ্গে ঘরবাড়ির অন্যান্য ধুলা, পাখির পালক, পশুর লোম থেকেও এ ধরনের অ্যালার্জি হয়ে থাকে। এ ধরনের অ্যালার্জিতে আক্রান্ত রোগীর নাসারন্ধ্রের পার্শ্ববর্তী মাংসপিÐ (ইনফিরিয়র টারবিনেট) ফুলে বড় হয়ে যায়। অনেকে এটিকে নাকের পলিপ বলে ভুল করে থাকেন।
ওষুধপত্র : ওষুধপত্র দেয়া হয় উপসর্গ অনুযায়ী। অ্যান্টিহিস্টামিনজাতীয় বিভিন্ন ওষুধের যে কোনোটি উপযুক্ততা বিচার করে ব্যবহার করতে হয়। এছাড়া রয়েছে সরাসরি অ্যালার্জিরোধক কিছু ওষুধ। এগুলো কারও বেলায় বেশ ভালো কাজ করে। অ্যালার্জির কারণে নাক বন্ধ হলে তার প্রতিরোধক ওষুধও সঙ্গে ব্যবহার করতে হয়। অনেক সময় স্টেরয়েডজাতীয় স্প্রে নাকের অ্যালার্জি সমস্যায় ব্যবহার করতে হয়। এজাতীয় স্প্রে একটু বেশি সময় ধরে ব্যবহার করতে হয়। এগুলো রক্তে খুব একটা শোষিত হয় না বলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও কম। তবে ৫ থেকে ৬ বছরের কম বয়সী শিশুকে এ স্প্রে ব্যবহারের ব্যাপারে বিতর্ক রয়েছে। একজন নাক-কান ও গলা রোগ বিশেষজ্ঞের তত্ত¡াবধানে নাকের অ্যালার্জিজনিত সমস্যার চিকিৎসা ধৈর্যসহ গ্রহণ করা উচিত।
ডা. সজল আশফাক
নাক-কান ও গলা রোগ বিশেষজ্ঞ
হলি ফ্যামিলি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা